ঢাকা , সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫ , ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুয়াকাটায় জেলের জালে বিরল প্রজাতির অ্যাঞ্জেল ফিশ


আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-১১ ১৭:১০:৫৬
কুয়াকাটায় জেলের জালে বিরল প্রজাতির অ্যাঞ্জেল ফিশ কুয়াকাটায় জেলের জালে বিরল প্রজাতির অ্যাঞ্জেল ফিশ

রাহাদ সুমন, বরিশাল ব্যুরো: পটুয়াখালীর কুয়াকাটা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলে আনোয়ার মাঝির জালে ধরা পড়েছে এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ নামের একটি বিরল প্রজাতির মাছ। কুয়াকাটা–সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে তাঁর জালে মাছটি ধরা পড়ে। রোববার সকালে মহিপুর বন্দরে মাছটি আনা হয়।

এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ দেখতে  মহিপুর বন্দরে মানুষের ভিড় জমে যায়। মাছটি অনেকের কাছে অ্যাকুয়ারিয়াম ফিশ নামেও পরিচিত। এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ রঙিন ও দৃষ্টিনন্দন একটি সামুদ্রিক মাছ, যা মূলত উষ্ণমণ্ডলীয় প্রবালপ্রাচীরের পরিবেশে বাস করে। মাছটির আকার ১৬ ইঞ্চির মতো। গায়ে গাঢ় নীলের ওপর হলুদ অনুভূমিক দাগ, মুখে নীল-কালো মাস্কের মতো প্যাটার্ন।

জেলে আনোয়ার মাঝি বলেন, এক সপ্তাহ আগে এফবি জারিফ তারিফ নামের একটি ট্রলার নিয়ে মাছ ধরার জন্য তিনি সমুদ্রে যান। জাল ফেলে তিনি অপেক্ষা করছিলেন। পরে জাল টেনে তোলার পর দেখা যায়, ট্রলারে অন্যান্য মাছের সঙ্গে এম্পারর অ্যাঞ্জেল ফিশ ধরা পড়েছে।

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আবদুস সোবহান শিকদার বলেন, ‘এমন মাছ আমার জীবনে দেখিনি। মাছটি দেখতে অবিকল অ্যাকুয়ারিয়ামে থাকা মাছের মতো। তবে আমি বাসার সবাইকে দেখানোর জন্য মাছটির কয়েকটি ছবি তুলে নিয়েছি।’

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ছগির আকন বলেন, ‘প্রথম দেখার পর মাছটি আমি বাসায় নিয়ে এসেছি। তবে এ–জাতীয় মাছ এই প্রথম দেখলাম। মাছটি খাওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’

পরিবেশ, প্রতিবেশ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশের গবেষণা সহকারী বখতিয়ার রহমান জানান, মাছটির ইংরেজি নাম অ্যাঞ্জেল ফিশ। বৈজ্ঞানিক নাম pomacanthus imperator। এটি উজ্জ্বল রঙিন একটি সামুদ্রিক মাছ। এর প্রাকৃতিক আবাসস্থল ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবালপ্রধান অঞ্চল। সর্বোচ্চ প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হতে পারে। মাছটি সাধারণত প্রবালপ্রধান, লবণাক্ত, উষ্ণ সমুদ্রাঞ্চলে থাকে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন মাছ সচরাচর ধরা পড়ে না। কারণ, এই উপকূলীয় অংশ মূলত কাদামাটি, বালুময়। প্রবালপ্রাচীর তেমন নেই। তবে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে আন্দামান সাগরসংলগ্ন ও মিয়ানমার উপকূলের কাছাকাছি কিছু প্রবালপ্রাচীর থাকায় সেখানে এ মাছ বিচরণ করে।

বখতিয়ার রহমান আরও বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন ও স্রোতের ধরন বদলের কারণে কিছু সামুদ্রিক প্রজাতি তাদের আবাসক্ষেত্র প্রসারিত করছে। এর কারণে হয়তো এই প্রজাতির মাছ বাংলাদেশের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে।

এই মাছ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) ও সামুদ্রিক প্রাণিবিশেষজ্ঞ কামরুল ইসলাম বলেন, অ্যাঞ্জেল ফিশ অ্যাকুয়ারিয়ামের একটি জনপ্রিয় মাছ। আকর্ষণীয় চেহারা ও শান্ত স্বভাবের জন্য এরা পরিচিত। এ মাছের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। এদের শরীর চ্যাপটা এবং পাখনাগুলো লম্বা ও ডানা আকারে বিস্তৃত, যা ‘অ্যাঞ্জেল’ নামের সার্থকতা প্রমাণ করে। এরা রুপালি, কালো, হলুদ ও বিভিন্ন নকশার সঙ্গে মিশ্রিত রঙে পাওয়া যায়। এরা মাংসাশী এবং বিভিন্ন ধরনের মাছের খাবারসহ রক্ত কৃমি ও ছোট ছোট চিংড়ি খেয়ে থাকে। সঠিকভাবে যত্ন করলে একটি অ্যাঞ্জেল ফিশ ৮-১০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।


 


নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ